ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার আগে অবশ্যই মনে রাখবেন
ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার আগে যে সব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ওয়েবসাইট তৈরী করতে হয়। আর ওয়েবসাইট তৈরী করতে হলে আপনাকে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশে হাজার হাজার ডোমেইন এবং হোস্টিং প্রভাইডার কোম্পানী আছে যারা মাসিক বা বাৎসরিক টাকার বিনিময়ে আপনাকে ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস দিয়ে থাকে। এত্তো এত্তো প্রভাইডারের মেধ্যে সবাই সমান ভালো সাভিস প্রদান করে না। কারো হোস্টিং ভালো তো কাস্টোমার সার্ভিস খারাপ। আবার কারো কাস্টোমার সার্ভিস ভালো তো হোস্টিং খারাপ। আবার কারো হোস্টিং এবং কাস্টমার সার্ভিস দুটোই খারাপ। তাই হুট করে কারো কাছ থেকে ডোমেইন এবং হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
ডোমেইন কেনার আগে যা যা খেয়াল রাখতে হবে:
১) কোন ধরনের ওয়েবসাইট করতে চাচ্ছেন সেটা আগে ভালোকরে পরিস্কার করে প্লান করবেন এবং ডোমেইন নেম কি নিবেন সেটা নিয়ে ভালো করে চিন্তা করবেন।
২) সাধারনত ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের জন্য .com ডোমেইন ই ভালো। তবে অপনার নেটওয়ার্কিং বিজনেস হলে .net নিতে পারেন। আবার আপনার প্রতিষ্ঠান নন-প্রফিটেবল হলে .org নিতে পারেন।
৩) ডোমেইনটি যত ছোট করা যায় চেষ্টা করতে হবে। এতে আপনার ভিজিটররা আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা খুব সহজে মনে রাখতে পারবেন। সুন্দর ওয়েবসাইট নেম একটি ভালো সম্পদ। একটি ডোমেইন অনলাইন ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় অ্যাসেট।
৪) ডোমেইন নেম ইউনিক নেয়ার চেস্টা করতে হবে যেন অন্য বড় কোন ব্রান্ডের সাথে গুলিয়ে না যায়।
ডোমেইন কোথা থেকে রেজিস্ট্রেশন করবেন:
১) আপনি একজন বাংলাদেশী হিসেবে, বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন নেয়া ভালো, কারন আপনি বিদেশি কোম্পানীর চেয়ে ভালো সার্ভিস পাবেন এরকম অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন বাংলাদেশে আছে। তাছাড়া বিদেশি কোম্পানীর কাছে ডোমেইন নিতে আপনাকে ডলারে পেমেন্ট পরিশোধ করতে হবে। যেখানে বাংলাদেশি প্রভাইডারের কাছ থেকে নিলে আপনি টাকায় পেমেন্ট করতে পারবেন।
২) ডোমেইনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি এবং বিদেশী কোম্পনীর কোন ডিফারেন্স নেই। বিদেশী কোম্পানী আপনাকে যেখান থেকে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে, বালাদেশী কোম্পানী সেখান থেকেই রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিবে।
৩) বাংলাদেশী প্রভাইডারের কাছে ডোমেইন নিলে একটি কথা তাকে আগে জিজ্ঞাসা করতে হবে, সে কি আপনাকে ডোমেইনের ফুল কন্ট্রোল প্যনেল দিবে? আপনি কি যেকোনো সময় আপনার সার্ভিসটি অন্য কোম্পানিতে ট্রান্সফার করতে পারবেন? ফুল কন্ট্রোল প্যানেল না দিলে আপনি তার কাছ থেকে ডোমেইন কিনবেন না।
৪) ডোমেইন হোস্টিং এর সাথে রিলেটেড। তাই হোস্টিং যে কোম্পানী থেকে নিবেন, সেখান থেকেই ডোমেইন নেয়া বেটার। তাতে আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং সার্ভিস একই সাথে পাবেন। কোনো সমস্যা হলেও তারা ভালো ভাবে সেটি দেখতে পারবেন।
৫) লোভনীয় অফারে ডোমেইন কিনতে হলে আগে ভালো করে অফার সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা নিন। অফারে সস্তায় নিতে গিয়ে আবার প্রোভাইডার এর কাছে ধরা না খান। তার কাছে আটকে না পড়েন।
৬) সাধারনত একটি ডোমেইনের মূল্য ৮০০-১২০০ টাকা হয়ে থাকে। এই প্রাইসের নিচে আপনাকে কেউ ডোমেইন অফার করলে আগে ভালো করে জিজ্ঞাসা করুন তার কি কি কন্ডিশন আছে। সার্ভিস তার কাছে আটকে না পড়েন।
হোস্টিং কেনার আগে যে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে:
ডোমেইন ক্রয় করার পর আপনাকে অবশ্যই হোস্টিং ক্রয় করতে হবে। হোস্টিং ছাড়া আপনি শুধু ডোমেইন দিয়ে একটি ওয়েবসাইট লাইভ করতে পারবেন না। ডোমেইন সার্ভিস সকল কোম্পানী প্রায় একই রকম দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রায় বেশিরভাগ কোম্পানীর হোস্টিং বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন মানের। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
১) বাজেট: ওয়েবসাইট করার আগে সবারই ডোমেইন হোস্টিং এর পেছনে একটা বাজেট করতে হয়। এই সময়ে হোস্টিং এর পেছনে ভালো বাজেট করবেন। আপনি কোন ধরনের সাইট করবেন। সাইটে ডেইলি ভিজিটর সংখ্যা কেমন থাকবে এটার উপর হোস্টিং বাজেট ঠিক করতে হবে। বাজেট ঠিক করার পর, সেইম বাজেটে আপনাকে ভালো মানের হোস্টিং যে কোম্পানী প্রভাইড করবে তার কাছ থেকে নিবেন।
২) হোস্টিং স্পেস: আপনার ওয়েবসাইট করতে কত পরিমান স্পেস প্রয়োজন সেটা ঠিক করে সে অনুযায়ী হোসিং প্যাকেজ বা প্ল্যান ক্রয় করুন।
৩) ব্যন্ডউইথ: আপনার ওয়েবসাইটে যত পরিমান ডাটা বা ফাইল থাকবে এবং যত পরিমান ভিজিটর আসবে তার উপর ব্যন্ডউইথ খরচ হবে। পার ভিজিটর এবং পার পেইজ ভিউ অনুযায়ী ব্যন্ডউইথ খরচ হতে থাকবে। মনে করেন ১ জিবি ব্যন্ডউইথে আপনার সাইটে ১০০০ ভিজিটর আসতে পারবে । তাহলে সাইটে ভিজিটর অনুযয়ী ব্যন্ডউইথ নিতে হবে। আপনার সাইটে ১০-১০০ জিবি ব্যন্ডউইথ নিয়ে নিতে পারেন। প্রয়োজনে আনলিমিটেড ও নিতে পারেন।
৪) হোস্টিং আপটাইম: হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপটাইম একটি খুবই গুরুত্বর্পূন বিষয়। হোস্টিং আপটাইম অনুযয়ী আপনার সাইট লাইভ থকবে। ৯৯.৯% এবং ১০০% আপটাইম দেখে আপিনি হোস্টিং নির্বাচন করবেন। অনেক কোম্পনী আপনাকে বলবে ৯৯.৯% আপটাইম। কিন্তু অপনি প্রকৃতপক্ষে সেটা পাবেন না। তাই হোস্টিং কেনার আগে আপনাকে হোস্টিং আপটাইম চেক করে নিতে হবে। এজন্য কোম্পানীর ইউজেস পলিসি পেজ দেখতে পারেন।
৫) মানি ব্যক গ্যারান্টি: হোস্টিং এর ক্ষেত্রে মানি ব্যক প্যারান্টি একটি গুরুত্ববহ বিষয়। আনেক কোম্পনীই ৩০ দিন মানি ব্যক গ্যারান্টি দিয়ে থাকে। এটা দেখে নিবেন। সাধারনত মানি ব্যক গ্যারান্টি দেয়া কোম্পানীগুলো সার্ভিস ভালো দিয়ে থাকে।
৬) হোস্টিং কোম্পানীর অবস্থা: হোস্টিং কেনার আগে তাদের প্রতিষ্ঠানের অবস্থা জানার চেস্টা করুন। তাদের কাস্টমার কেয়ারে কথা বলুন। তাদের নিজস্ব অফিস আছে কি না জানুন। নিজেস্ব অফিস এবং ওয়ার্কার টীম না থাকলে তারা ভালো সার্ভিস এন্ড সাপোর্ট দিতে পারবে না। তাদের সার্ভিস ব্যবহার করে এমন করোর ফিডব্যক নিতে পারলে ভালো হয়। তাদের সার্ভারের অবস্থান জানুন। সকল কিছু বিবেচনা করে ফাইনাল অর্ডার করুন।
৭) সাপোর্ট: হোস্টিং এর জন্য সাপোর্ট একটা গুরুত্ববহ বিষয়। আপনার হোস্টিং এ কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে তাদের সাপোর্ট আপনাকে নিতে হবে। সাপোর্ট পেতে আপনাকে কয়েকদিন সময় লাগলে আপনি আপনার সাইটের লক্ষ লক্ষ ভিজিটর হারাবেন। আর আপনি রিসেলার হলে তো কথাই নাই। আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে সমস্যা জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু আপনি কোন উত্তর দিতে পারবেন না।
৮) হোস্টিং এর ধরন: আপনার কাজে কোন ধরনের হোস্টিং প্রয়োজন সে অনুযায়ী অর্ডার করুন। উইন্ডোজ এবং লিনাক্স হোস্টিং এর মধ্যে আপনার কোনটি দরকার জেনে নিন নেয়ার আগে।
৯) ফিচারসমূহ: হোস্টিং নেয়ার আগে তাদের প্রদানকৃত ফিচারসমূহ জেনে নিন। আপনার প্রয়োজনের সাথে মিল হলে তখন সেখান থেকে হোস্টিং ক্রয় করুন।
১০) লিমিটিশন: আপনি ছোট কোন প্যকেজ নিলে সকল লিমিটেশন আপনার প্যাকেজে উল্লেখ থাকবে। নিন্তু আনলিমিটেড প্যাকেজ নিলে আপনাকে লিমিটেশন জেনে নিতে হবে। মানে রাখবেন পৃথিবীতে সব কিছুরই একটা লিমিট আছে। আপনার কাছে আনলিমিটেড হবে সেটাই যেটার লিমিট আপনি ক্রোস করতে পারবেন না।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো খেয়াল করে ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনলে আপনাকে ঠকতে হবে না। আশাকরি ভালো মানের হোস্টিং এবং ডোমেইন সার্ভিস পাবেন।
লেখকঃ
মোঃ মেহেদী
সিইও এবং ফাউন্ডার, ওয়েব হোস্ট বিডি
ধন্যবাদ আপনার এই মুল্যবান আর্টিকলটির জন্য।আমি একটি একটি সাইট খুলতে যাচ্ছি অনলাইন ইনকামের জন্য।আমি দেখছি এবং শিখছি। আমার কোন গাইড নাই।
এ দেশের তরুনরা সত্যিকার অর্থে অভিভাবকহীন।কিভাবে অনলাইন আর্নিং করা যায় তা আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ তরুন জানে না। আমি ইউটিউব ভিডিও এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু জেনেছি আনেক কষ্ট করে। ইংরেজি জানার কারনে আমার অনেক কিছু বুঝতে সহজ হয়েছে।ইংরেজরা কত গতিশীল এবং সৎ তা তাদের ভিডিওর মাধ্যমে বোঝা যায়। সরকারিভাবে তরুনদের হাতে কলমে সব কিছু শেখানো দরকার।এদিকে কারোর তেমন খেয়াল নেই।
আপনার এ লেখা থেকে আমি বেশ উপকৃত হয়েছি। আমি আনেকি দিন ধরে এ বিষয়গুলো জানতে চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় আমি আপনাদের সাথে ডোমেইন রেজিঃ করব। তবুও আরও একটু বোঝার জন্য সকল দোকান যাচাই করে দেখছি।
বিশ্বস্থ হোস্টিং সাইট পওয়া ই ঝামেলা। এখনো ফ্রি সাইটেই কাজ করতেছি। ব্লগার, উইবলী বাদ রাখি নাই কোনো সাইট। কিন্তু এটা আর সম্ভব নয়। আপনার আর্টিকেল একটা এটা ভালো ধারনা পেলাম।
এখন ডমিন হোস্টিং এর ব্যপারে একটা নিদ্ধান্ত নিতে চাই।
ধন্যবাদ।